তাহাদের গল্প - ৩
চলো এখানে বসি। কি করছিলা?
ভাবছিলাম, পেপারের এড দিবো কিনা।
কিসের এড?
পাত্রী চাই। মোটা কালো ব্যাপার না। পাসপোর্ট সাইজের ছবি লাগবে না। বাবার ব্যাঙ্ক ব্যালেন্সের এস্টেটমেন্ট সহ যোগাযোগ করুন।
বাবার ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স?
হ্যা বাবার ব্যাঙ্ক ব্যালান্স। পাত্রীর মতোই মোটা আর কালো মানিতে ভরপুর।
এত টাকা দিয়ে কি করবা?
ওমা, এর পরের বিয়েতে খরচপাতি আছে না?
এর পরের বিয়ে! প্রথম বিয়ের বৌ মেনে নিবে?
ওতো সারী ইস্ত্রি করতে গিয়ে ইলেক্টিক সকে মারা যাবে। আমার দুক্ষ যদি দেখতা। নাওয়া খাওয়া নেই, সারাদিন ঘরের এক কোনায় ঝিম মেরে পরে থাকা। অবশ্য মদের গন্ধটার কোনো একটা ব্যবস্থা করতে হবে।
ওই ধান্দা মোটেও কাজ করবে না। যার বাবার এত কালো টাকা, সে নিশ্চই সেরকম ক্ষমতাবান। শেষে তোমাকে জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়বে। আরো ড্রামাটিক কিছু হতে হবে।
কি রকম?
আচ্ছা, প্রথম বৌয়ের ছোট বোন তোমার প্রেমে পড়লে কেমন হয়?
ছোট বোন আবার আসলো কোথা থেকে আর এসেই আমার প্রেমে পরে গেলো কিভাবে?
আহা ও তো আর জানে না যে তোমার ওই সাদাসিদে গোবেচারা চেহারার পেছনে ইবলিস কিলবিল করছে। ওতো জানে যে তুমি এক অসহায় মানুষ, অভাবে পরে ওর বড়ো বোনকে বিয়ে করেছো। পরে বুঝেছো আসলে জীবনে শুধু টাকাটাই বড় না। সত্যিকারের ভালোবাসার মূল্য আরও অনেক অনেক বেশী। ইত্যাদি ইত্যাদি।
তুমি তো দেখি এক লাফে বলিউডে চলে গেলে!
হুমম। মাথাটা ঠিক মতো কাজ করছে না। একটা সিগারেট খেতে পারলে ভালো হতো।
সিগারেট খাওয়া ধরলে আবার কবে থেকে! নিশ্চই তোমার ওই আঁতেল ফ্রেন্ডের অবদান? বাই দা ওয়ে, কেমন আছেন উনি?
জানিনা। ফোন দেয়নি অনেকদিন। ভালোই আছে নিশ্চই। একটা সিগারেটের ব্যবস্থা করো না প্লিজ?
দোকান তো সেই গেটে। অনেকদুর হেটে যেতে হবে। মোবাইল মামুদের দেখলে ডাক দিও। আচ্ছা হোমিসাইড হলে কেমন হয়? ধরো ঘরে ডাকাত পড়লো? এমনকি রিয়ালিস্টিক করার জন্যে আমি হাতে একটা রাম দাঁড় কোপও খেলাম। বাম হাতে অবশ্যই।
গুড। সেক্ষেত্রে পুলিশের মার খেয়ে তুমি সত্যি কথা বলা শিখবে।
তোমাকে আমি জীবনে কয়টা মিথ্যা কথা বলেছি?
এক হাজারটা।
আমি তোমাকে কখনই কোনো মিথ্যে কথা বলিনি।
এক হাজার একটা। কংগ্রাচুলেশন। আরব্য রজনীর সমান হলো।
সব গুনে রেখেছো মনে হয়? তো তোমার মেমোরি যখন এত ভালো, বলতো আমার প্রথম মিথ্যেটা কি ছিলো?
ইয়াস, সুইসাইড করবে।
আহা ওই সময় সত্যি আমার খুব খারাপ লাগছিলো। তাছাড়া ...আচ্ছা ঠিক আছে বাবা, ওটা তোমাকে পটানোর জন্যেই বলেছিলাম, খুশি? তোমাকে পটানো কি সহজ কাজ মনে করেছো? নিজে একবার ট্রাই করে দেখো তো।
আরে তুমি না গাধা, তোমার প্রথম বৌ সুইসাইড করবে।
ওটা কি করে সম্ভব? আরেকজনের মাইন্ড আমি কিভাবে কন্ট্রোল করবো? তার থেকে হোন্ডা এক্সিডেন্ট হলে কেমন হয়?
এক্সিডেন্ট ফ্যাকসিডেন্টে হবে না। সুইসাইডই করতে হবে। সবই সম্ভব। শুধু একটু মাইন্ড গেম খেলতে হবে এই আর কি। বাই দা ওয়ে, তোমার কি ধারণা আমি পোটে আছি?
ব্যাঙ্ক ব্যালান্স তো দূরের কথা, আমার তো ব্যাঙ্ক একাউন্টই নাই। তাই আমার সাথে তোমার এভাবে টাইম ওয়েস্ট করার অন্য কোনো লজিক্যাল কারণ খুঁজে পাচ্ছি না আপাতত।
এখন নাই ব্যাট বড়ো বউ মারা গেলেই তো হবে বলে মনে হচ্ছে।
তুমি কি আবার আমার ছোট বউ হবার ধান্দা করছো নাকি? আমি কিন্তু আরেকটু ইয়ং টাইপের মেয়ের কথা ভাবছিলাম।
ফালতু কথা না বলে আগে আমার প্লানটা শোনো। ধরো তোমাদের বিয়ে হলো। দেখতে দেখতে দু বছর কেটে গেলো মহা সুখে। তারপর সুখের পরিমান আরো বেড়ে গেলো যখন তোমাদের ঘরে ফুটফুটে একটা কন্যা সন্তান জন্ম নিলো। তোমরা নাম রাখলে প্রিতি জিন্দা।
ইয়ে মানে, বাচ্চা কাচ্চা হয়ে গেলে কি আর দুই নাম্বারী করার মন মানসিকতা থাকবে?
সমস্যা নেই। ছমাসের মাথাই প্রিতি জিন্দা প্রিটি মুর্দা হয়ে যাবে।
বলো কি! কিভাবে? না থাক, বলার দরকার নাই।
আরে শোনোই না। পুরা ফুল প্রুফ প্ল্যান। প্রিতি মারা যাবে ঘুমন্ত অবস্থায়। দম বন্ধ হয়ে।
তুমি থামবা?
ঘুমের ঘোরে তোমার বৌয়ের একটা মোটা কালো হাত ওর নাকের উপর চলে গিয়েছিলো তাই। তুমি যেন একদম বিস্বাসী করতে পারছো না। এইতো গত রাতেও যখন ওর মা কমপ্লেইন করছিলো এক্সপারি ডেট পার না হলে ডায়েট কোকের টেস্ট এমন ওষুধ ওষুধ মার্কা হবে ক্যান, তখনও প্রিতি কি সুন্দর তোমার দিকে তাকিয়ে কেমন ফ্যালফ্যাল করে হাসছিলো। আর এখন আর কোনো নড়াচড়া নাই, একদম নিথর হয়ে পরে আছে।
তুমি যদি এখন থামো তাহলে এখনি আমি তোমাকে পুরা এক প্যাকেট সিগারেট কিনে দিবো।
তারচে বরং বড়ো বৌ চলে যাওয়ার পর এক কার্টোন কিনে দিও।
বড়ো বউ না যাওয়া পর্যন্ত থামবে না তাই না?
ইয়াস ডিয়ার। শোনো, বড়ো বউ খাওয়া দাওয়া প্রায় বন্দই করে দিয়েছে। ও নিজেকে কোনো ভাবেই ক্ষমা করতে পারছে না। সারাক্ষন সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে আর একটু পর পর ফ্যাশ ফ্যাশ করে কাঁদে। এভাবেই চললো পুরো এক সপ্তাহ। কিন্তু তারপরে ওর বান্ধবীদের আলাপের মেইন বিষয় বস্তুই হলো - আল্লাহ জানিস কেও ভাবতেও পারেনি ও এমনটা করে বসবে। কিভাবে আবার? ওর হাসব্যান্ড ওকে চারতলার ছাদে নিয়ে গিয়েছিলো মন ভালো করতে। একটু পরেই ও ভাইয়াকে বললো মোড়ের ডিসপেনসারি থেকে মাথা ব্যথার ওষুধ কিনে আনতে। গেটের দারোয়ান বলেছে ভাইয়া বের হবার ঠিক পাঁচ মিনিটের মাথাই ও লাফ দিয়েছে। বাসার সামনে চিল্লাচিল্লি শুনে ভাইয়া দৌড়ে এসে দেখে এই কান্ড। কি অবস্থা বলতো? এরকম ছেলে মানুষী কেও করে! বেবি তো আরো নেয়া যেত, যেতো না? এখন ওর হাসবেন্ডের কি হবে বলতো? ইস বেচারা, এক সপ্তাহের মধ্যেই বৌ বাচ্চা দু জনকেই হারালো। আসলে এই মেয়েটা ছোট বেলা থেকেই ভীষষষণ সেন্টিমেন্টাল ছিলো।
হুঁহ, এই তোমার ফুল প্রুফ প্ল্যান? তুমি কি ভেবেছো শোকে দুঃখে ও ছাদ থেকে লাফ দিবে? আর সুইসাইড করা এতোই সহজ মনে করেছো? মোটেও না। আমি বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি।
আরে ছাগল লাফ দিতে যাবে কোনো! মোটা বলেই গাঁধা নাকি মেয়েটা? আমি যে তোমাদের উপর তলায় ভাড়া নিয়েছিলাম সেটা বলা হয়নি? যাহোক, তোমার রাস্তা ক্লিয়ার করে দিয়েছি। এখন তুমি শুধু খবর নিয়ে দেখো তোমার এক্স বৌয়ের বান্ধবীদের মধ্যে কে বেশি ইয়ং টাইপের ... কি বেপার? এমন বিচিত্র চেহারা বানিয়ে তাকিয়ে আছো কেনো? তুমি কি সত্যি সত্যি পেপারে এড দেবার কথা ভাবছিলে নাকি? আরে জোক করছি বাবা জোক। তোমার সাথে টাইম ওয়েস্ট করছি, টাইম ওয়েস্ট। এন্ড স্পিকিং অফ টাইম, আমার এবার যাবার সময় হয়ে গেছে।
আচ্ছা, ধরো, তোমার সাথে যদি আমার বিয়ে হয়। মাথা নেড়োনা, ধরো যদি হয়। আর আমাদের যদি বনিবনাটা ঠিকমতো না হয়। তাহলে সুইসাইডটা আমাকেই করতে হবে তাই না? ওর এটলিস্ট লোকে তাই জানবে, তাইনা?
সেই সৌভাগ্যটি তোমার কপালে নেই।
কোনটা? বিয়েটা না সুইসাইড করাটা?
উফফ....
আচ্ছা মানছি, ফুল প্রুফ প্ল্যান। তাহলে এখন পেপারে এডটা দিয়েই দেই কি বলো?
তাহলে ঢালিউড স্টাইলেই বলি - একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের এত বড়ো সর্বনাশটা কি করে করি বলো? শুধু এক কার্টোন সিগারেটের জন্যে।
তাহলে এড দিবো না?
পেপারে এড দিতে পয়সা লাগে। এক প্যাকেট সিগারেটের পয়সায় পেপারে এড দেয়া যায়না সো, এসব ফালতু চিন্তা না করে, আমার সাথে টাইম ওয়েস্ট না করে একটা জবে ঢোকো। আমি গেলাম।



Comments
Post a Comment