জীবনের ছোট খাটো চিট চ্যাট - ২
কাবা শরীফে মাগরেবের নামাজ শেষ করে হোটেলে ফিরে বেশ আয়েস করে ল্যাটকা খিচুড়ি আর ডিম ভুনা দিয়ে রাতের খাবার সেরে সিঙ্গেল খাটটা ঝাড়পোষ করে দোয়া দুরুদ পরে সারা গায়ে ফুঁ-ফাঁ দিয়ে বিছানায় শুয়ে কেবলি চাদরটা মাথার উপরে টেনে জম্পেস একটা ঘুম দিতে যাবো ঠিক এই সময়ই হটাৎ খটাস করে রুমের দরজা খুলে কামাল ভাই প্রায় চিৎকার করে বললেন - জাহিদ ভাই জলদি উঠেন!
কামাল ভাই আমার থেকে বয়েসে বেশ ছোটো। ঢাকায় ছোটো খাটো (তার ভাষায়) একটা চারকি করেন তবে অনেক হাসি খুশি একজন মানুষ। আমলের সময় বেশ ভক্তি নিয়ে আমল করেন আর বাকিটা সময় আমাদের রুমটা হাসি ঠাট্টায় মাতিয়ে রাখেন। পুরো হোটেলটাই বিভিন্য জায়গা থেকে আসা বাঙালি কাফেলার দখলে আর তার মধ্যে দোতালাটা দিনাজপুরবাসীদেড়। আমি একাই শুধু ভিনদেশী। অফিসের এক কলিগের বাবার সাথে হাত মিলিয়ে হজের প্যাকেজ কিনেছি তাই উনার দেশের বাড়ীর সব লোকজনের সাথেই ঠাসাঠাসি করে সৈদি আরবে এসেছি। কলিগের বাবার অবশ্য ভিন্ন রুমে জায়গা হয়েছে। আর আমার রুমের বাসিন্দা বলতে - আমি, কামাল ভাই, হুজুর, লুৎফর দাদু, দেলোয়ার ভাই আর হেড মাস্টার। হজে এসেই এদের সবার সাথে পরিচয়।
যাহোক আমি চাদরে মুখ ঢাকা অবস্থাই মিনমিনে গলায় বললাম - শুয়ে পড়েছি কামাল ভাই।
জলদি উঠে আমার সাথে আসেন নাহলে পরে নিজেই পস্তাবেন - বলে শাসালেন কামাল ভাই।
চেঁচামেচি শুনে হার খটখটে শুকনো লিকলিকে লুৎফর দাদু বিছানার অর্ধেক উঠে বসে থুতনির এক গোছা ধবধবে সাদা দাড়িতে হাত বোলাতে বোলাতে আবদার ধরলেন - আমিও আসি?
না তুই শুরে ঘুমা - বলেই কামাল ভাই দেখলেন দাদুর শুকনো মুখটা আরো শুকিয়ে গেলো। কামাল ভাই দুই এক মুহূর্ত তার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে তাকে খুশি করানোর জন্যে বললেন - কিরে দাদু! সৌদি আরবের তেল চর্বি খেয়ে দেখি তোর মুখে জৌলস চলে এসেছে! দেশে ফিরে আরেকটা বিয়ে করবি নাকি?
শুনে লুৎফর দাদু লজ্জা মেশানো একটা হাসি দিয়ে বিড়বিড় করে কি যেন বলতে বলতে আবার ওকাথ হয়ে শুয়ে পড়লেন।
ততক্ষনে আমি বিছানায় উঠে বসে, পরে পস্তানোটা ঠিক হবে কিনা ভাবছি। কামাল ভাই আমার দিকে ঘুরে - তাড়াতাড়ি পায়জামা পাঞ্জাবি পরে হোটেলের গেটে আসেন - বলে হুঙ্কার দিতে ফস করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।
আমি পাঞ্জবী পায়জামা পরে হোটেলের গেটে এসে দাঁড়াতেই দেখলাম রাস্তায় দাঁড় করানো একটা সেডান গাড়ির সামনের প্যাসেঞ্জার সিট থেকে মাথা বের করে কামাল ভাই হাতের ইশারায় আমাকে ডাকছেন। আমি গিয়ে গাড়ির পেছনে উঠে বসতেই পাস থেকে হুজুর কঠিন সহি উচ্চারণে আমাকে লম্বা একটা সালাম দিলেন। আমি ভেবাচেকা অবস্থায় কোনোমতে যতটা সম্ভব লম্বা করে সালামের উত্তর দিলাম। হুজুর এক গাল হাসি মুখে জিজ্ঞেস করলেন - ঘুমায় পড়সিলেন নাকি ভাই?
হুজুর সাহেবের নামটা আমার জানা হয়নি। সবাই হুজুর বলেই ডাকেন কারণ উনি হলেন কালাম ভাইয়ের গ্রামের মসজিদের প্রধান হুজুর। বয়েস খুব বেশি নয়। কালাম ভাইয়ের কাছাকাছিই হবেন। দুজনের মাঝে খুব মিল। একই গ্রামে একসাথেই খেলা ধুলা করে বড়ো হয়েছেন হয়তো। হজের পুরো সময়টা দুজন এক সাথে আঠার মতো লেগে ছিলেন।
আমি জবাব দিলাম - না জাস্ট শুরে পড়েছিলাম। আমরা কোথায় যাচ্ছি?
হুজুর কিছু বলার আগেই সামনের সিট থেকে কালাম ভাই মাথা ঘুরিয়ে বললেন - ইনি জাহিদ ভাই। আমাদের সাথেই আছেন। আর ও আমার খালাতো ভাই - বলে আমাকে ড্রাইভিং সিটে বসা যুবকের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। তারপর আরো বলতে থাকলেন - ও অনেকদিন ধরেই সৌদি আরবে আছে। এখানে একটা মেনেজারির চাকরি করে। একদমই সময় পায়না। তবে এখন একটু সময় পেয়েছে।
আমি রেয়ার ভিউ মিররে খালাতো ভাইকে প্রশ্ন করলাম - তো আমরা কোথায় যাচ্ছি ভাই?
উনি গাল ভরা একটা হাসি দিয়ে, ভাই গেলেই দেখতে পাবেন - বলে গাড়িতে স্টার্ট দিলেন।


Comments
Post a Comment