খেলার শুরু
ঢাকার সূর্য ডুবেছে প্রায় বিশ মিনিট আগে। রাস্তার পাশের সারি সারি দোকানের ঝকঝকে আর তাদের পেছনের ঠাসাঠাসি বাসাবাড়ির জানালায় হলদে বাতিগুলি ধূসর সন্ধ্যা ঠেলে মাথা চারা দিয়ে উঠতে শুরু করেছে। মাগরিবের পরের কোনো মতে দুই রাকার সুন্নত পরা মুসল্লিরা মসজিদের গেট দিয়ে দলে দলে বের হয়ে আসছে। তাদের সাথে বাড়ি ফেরা লোকজনে ফুটপাতগুলো জিগ্ জিগ্ করছে। আর রাস্তার মাঝে সারি সারি গাড়িগুলো কোনোমতে ঠুকুর ঠুকুর করে এগুচ্ছে। ঠিক এই সময়টাই গাড়ি গুলির পোঁ পাঁ শব্দগুলো যেন একটু বেশিই বেড়ে যায়। সারাদিন অফিসের জুরুরি কাজ সেরে ক্লান্ত কিছু সৌভাগ্যবান তাদের বাসের সিটে বসে জ্যাম সুবাদে শর্ট ন্যাপের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাকিরা এখনো তাদের টার্নের অপেক্ষায় রড ধরে ঝুলছে। কেও বাসের কন্ট্রাক্টরের চুন থেকে পান খসার অপেক্ষায় আছে। কেও নিজেকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে আর পাঁচ দিন গেলেই মাইনা পাওয়া যাবে। তবে বেশির ভাগই হয়তো জানে না সময়ের পরিবর্তনে এগুলোই একসময় স্বর্ণালী মুহূর্তে পরিণত হবে।
ওদিকে অদূর ভবিষ্যতে, আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স আর কোয়ান্টাম কম্পিউটিং একে অপরকে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে চলছে। এদের ম্যাচুরিটি লেভেল ঠিক যেই পয়েন্টে একে অপরকে ক্রস করবে সেটাই হলো ডিজিটাল বিধাতার জন্ম লগ্ন। হা ডিজিটাল বিধাতা, যার জামানায় কোনো দুঃখ কষ্ট নেই। নেই কোনো অবিচার। যার জমিনের কোনো শুরু নেই শেষও নেই। আছে শুধু অফুরন্ত ফুরসৎ। চোখের পলকে চলে যাওয়া যায় এক ভুবন থেকে আরেক ভুবনে। কিংবা ফিরে যাওয়া যায় সেই ফেলে আসা অতীতে। যেখানে সবাই সমান। অন্ধ, খোঁড়া, বোবা, কুষ্ট রোগী সবাই পরিশুদ্ধ ভাবে। সবার সর্ব কামনাই পূরণ যোগ্য। এমনকি কবর খুঁড়ে তুলে আনা যায় হারানো প্রিয়জনকে। জীবিত এবং অমরণশীল। লাল পরী নীল পরী, নীল পরী লাল পরী সবার সাথেই ভাব করা যায় এমনি এক সত্যিকারের স্বপ্নপুরী। শর্ত শুধু একটাই। নিজেকে পুরপুরি সপে দিতে হবে ডিজিটাল বিধাতার শানে। নিউরো লিংকের মাধ্যমে। কোনো রকম ধোঁকাবাজী চলবে না। কারণ ডিজিটাল বিধাতা জানেন সবার প্রকাশ্য ও গোপন খবর।
পৃথিবীর প্রায় সবাই নিজেকে সোপে দিয়েছে ডিজিটাল বিধাতার কাছে। এমনকি ধর্ম গুরুরাও শেষ পর্যন্ত জনতার করুন মুখের দিকে তাকিয়ে হালাল ঘোষণা দিয়েছে এই বিধাতার জগৎকে। সেজন্য অবশ্য বেশী বেগ পেতে হয়নি কারণ বুখারী শরীফের প্রথম হাদীসেই তো বলা আছে নিয়তই সব কিছুর মুলে। তাছাড়া ডিজিটাল জগতে যে চায় তার জন্যে নামাজ কালাম এমনকি বিনা মূল্যে হজের ব্যাবস্তা আছে (সরি শাহরিয়ার ভাই)। গুটি কয়েক যে কজন তা মেনে নিতে পারেনি তাদের উপর অবশ্য চরম করুনাময় ডিজিটাল বিধাতা কোনো প্রকার ক্ষোভ প্রকাশ করেনি। সময়ের চাপে ওসব পুরোনো ধ্যানধারী চরম মূর্খ অপদার্থগুলো এমনিতেই হারিয়ে যাবে পৃথিবীর বুক থেকে।
ঢাকার সূর্য ডুবে গাছে প্রায় দেড় ঘন্টা আগে। বাবুর বাসার সামনে একে একে জড়ো হতে শুরু করেছে সবাই। ঠাঁসা ঠাঁসা বিল্ডিং গুলোর মাঝে একচিলতে ফাঁকা জমিতে ব্যাডমিন্টনের কোর্ট কাটা হয়ে গেছে গতকালকেই। সরকারি মেইন লাইনে লুকোনো তারের সংযোগ দিতেই চুরি করা বিদ্যুতের আলোয় ঝকমকে হয়ে উঠলো চারিদিক। চাদা দিয়ে কেনা দুইশো পাওয়ারের আটটা বাল্ব। উঠে দাঁড়িয়ে এক হাতে পাছার ধুলো ধুলো ঝাড়তে ঝাড়তে মাঠের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সবাই। এখনই শুরু হবে খেলা। চলবে যতক্ষণ পর্যন্ত না খিদেয় পেট চো চো করে।



Comments
Post a Comment