স্বপ্নের ছবি
স্বপ্নের ছবি তুলে রাখা যায় না।
না কোনো কবিতা বা গানের লাইন না। সত্যি সত্যি স্বপ্নে কোনো ছবি তুলতে পারছিনা আমি। পুরোটা না শুনলে অবশ্য এটা একটা পাগলের প্রলাব মনে হতে পারে কিন্তু আই প্রমিস দেয়ার ইস মোর টু দিস।
আর সবার মতোই এখন আমার মোবাইল ফোনের ক্যামেরাতেই টুকটাক ছবি তুলতে বেশ ভালো লাগে। এক সময় অবশ্য শখটা বেশ বড়োসরোই ছিলো। প্রায় পনেরো বছর আগে রীতিমতো পঁচাত্তর হাজারের মতো খরচ করে ডিএসএল ক্যামেরা, দু তিন প্রকারের লেন্স, ট্রাইপড সবই কিনেছিলাম। ফটোগ্রাফি গ্রুপের সাথে সারাদিনের ফটো তোলা ভ্রমণেও চলে যেতাম ঢাকার বাইরে। সেরকম একটা প্রোগ্রামেই সেবা প্রকাশনীর লেখক, কিশোর পত্রিকার সম্পাদক টিপু কিবরিয়া ভাইয়ের সাথে পরিচয় হয়েছিলো। তার মাধ্যমেই সে সময়ের বিখ্যাত রহস্য পত্রিকায় কিছু ছবিও ছাপা হয়েছিলো। এতকিছু বলার কারণ এটা বোঝানোর জন্যে যে এই ছবি তোলাটা আমার আসলেই খুব পছন্দের একটা কাজ। তাই মাঝে মধ্যে স্বপ্নে ঘুমের ঘোরেও আমার ছবি তুলতে যাওয়াটা খুব একটা অবাক হবার মতো কিছু না।
কিন্তু আগে খেয়াল না করলেও বেশ কয়েক বছর ধরে দেখছি স্বপ্নে কোনো অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য দেখে তার ছবি তুলতে গেলেই আমার ক্যামেরাটা আর কাজ করছে না। করছে না তো করছেই না। আর বেশী জোরাজোরি করতে গেলে বরং ঘুমটাই ভেঙ্গে যায়। জানি দুনিয়া উল্টানো কোনো ব্যাপার না তবুও এরকম একই অবস্থার পুনরাবৃত্তি হতে দেখে গুগলে সার্চ দিয়েছিলাম ব্যাপারটা কি জানার জন্যে। অবশ্য গুগলে সার্চ দেয়া আর না দেয়া আজকাল সমান ব্যাপার। রাজ্যের ফালতু সব হরোস্কোপি টাইপ সাইট এ নিয়ে গেলো যেখানে এর কারণ হিসেবে - তুমি নিজেকে নিঃসঙ্গ মনে করছো বা তোমার নিজের উপর কন্ট্রোল নেই বলে মনে করছো টাইপ আজে বাজে কথা লেখা। যাহোক একটা জিনিস অবশ্য জানতে পেরেছি যে এই প্রশ্ন শুধু আমার একারই নয়।
উপায় না দেখে চ্যাট জিপিটিকেই প্রশ্নটা করলাম। ও বললো স্বপ্নে ছবি তুলতে না পারাটা সার্বজনীন না হলেও বেশ কমন একটা ফিনোমিনন। আরও বললো ওর জানা মতে এ বিষয়ে কোনো সায়েন্টিফিক রিসার্চ না হলেও এটার কারণ এ হতে পারে যে, ছবি তোলায় খুব মনোযোগে আর ফাইন মোটর স্কিলের এর প্রয়োজন হয় তাই অনেকের পক্ষে স্বপ্নে এটা করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। চ্যাট জিপিটির এই মন্তব্য আমার কাছে মোটেও বিস্বাসযোগ্য মনে হয়নি। স্বপ্নে আমি ড্রাইভ করে বেড়াচ্ছি, আকাশে প্লেইন চালাচ্ছি। সারা জীবনে ক্রিকেট ব্যাট হাতে ছুঁয়ে না দেখলেও দিব্যি ছক্কা পেটাচ্ছি। এমনকি খুব মনোযোগ দিয়ে বন্ধুক তাক করে গুলিও ছুড়ছি অনায়েসেই! তাহলে শুধু ক্যামেরাটা তাক করে শুধু একটা বাটন চাপতে অসুবিধাটা কই? এমনতো না যে স্বপ্নে অবাস্তব উদ্ভট কিছু ঘটে না। চা খেতে খেতে আমার বন্ধুর মাথাটা ঘোড়ার মাথায় পরিণত হচ্ছে। আমিও দিব্যি চায়ে চুমুক দিতে দিতে ঘোড়ার সাথেই কথোপকথন চালিয়ে যাচ্ছি যেনো এটাই স্বাভাবিক। তো মস্তিস্ক যদি নিশ্চিন্তে কথা বলা ঘোড়াকে বন্ধু হিসেবে চালিয়ে দিতে পারে তাহলে একটা ছবি তুলতে গেলে হিমশিম খাবে কেনো? ছবি তুলতে তো তার কোনো পয়সা লাগবে না। তো তুলতে যখন দিবেই না, তখন নষ্ট ক্যামেরাটা শুধু শুধু হাতে ধরিয়ে দেয়ার মানেটা কি?
যাহোক যেহেতু সবার না হলেও এটা একটা কমন ফিনোমিনন, গবেষকদের উচিৎ এর কারণটা তলিয়ে দেখা। এর থেকে হয়তো আমাদের মনস্তাত্ত্বিক কোনো নতুন তথ্যও আবিষ্কার হতে পারে। তো গবেষকরা যতদিন পাত্তা না দিচ্ছে, যথারীতি আমাকেই আমার নিজের থিওরী দাঁড় করাতে হবে।
আমার ধারণা, সপ্নের জগৎটা হলো সেলফ ডায়াগনস্টিক এর জগৎ। ঘুমের ঘোরে যখন ফিজিক্যাল দেহের মেরামতের কাজ চলে, সেই সময়ে সত্তাটাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় আত্তার জগতে। এই আত্তার জগতের সাথে আমাদের বাস্তব জগতের এতটাই অমিল যে সেই জগৎটা এ জগতের ভাষায় বর্ণনা করা অসম্ভব। আর সে কারণেই বেশীর ভাগ স্বপ্নই আমাদের স্মৃতি ধারণ করতে পারে না। ঘুম পুরোপুরি ভাঙ্গার আগেই বেশীর ভাগই ঝরে পরে যায়। ততটুকুই রয়ে যায় যতটুকু এ জগতের ভাষার সাথে সমঞ্জস্যপূর্ণ কিছু দিয়ে রিপ্লেস করে দেয়াসম্ভব। আর এই কাজটা করার সময় মস্তিস্ক যদি টের পায় যে সত্তাটা কোনো কিছু ক্যামেরার মাধ্যমে ছবির ফ্রেমে আবদ্ধ করার চেষ্টা করছে তখনি তার মাথাটা বিগড়ে যায়। কারণ সে ছোটো বেলা থেকেই দেখে এসেছে যে ক্যামেরা নামক এই বসতুটার মূল কাজ হলো আমি যা চোখে দেখছি তার হুবহু একটা কপি তৈরী করা। আর মস্তিস্ককে কাছে সেটা মোটেও গ্রহণ যোগ্য নয়। কিছু এক কাঠি সরেস উন্নত মস্তিস্ক অবশ্য ছবি তুলতে দেবে ঠিকই তবে ছবি তোলার পরে আসল ছবিটা জামার হাতায় গুঁজে রেখে নকল ছবিটা হাতে ধরিয়ে দেবে। আর যেসব মস্তিস্ক এখনো জাতে উঠতে পারেনি তারা বরং ক্যামেরাটাকেই নষ্ট বলে চালিয়ে দেয়াটা সহজ মনে করে।
জানি উদ্ভট সব কথা বার্তা কিন্তু বিশেষজ্ঞরা যতদিন না সত্যিকারের তথ্য প্রদান করতে পারছে, আপাতত ততদিন এ দিয়েই মনকে সান্তনা দিতে হবে।



Comments
Post a Comment