মানুষ শুধুমাত্র তাই দেখতে পায় যা সে দেখতে চায়
একটা ইসলামিক লেকচারে একজন খুব সুন্দর একটা কথা বলেছে যেটা শোনার পর জিম কেরির একটা কমেডি মুভির কথা মনে পড়লো। জিম ক্যারির ডাম্ব অ্যান্ড ডাম্বার মুভিতে জিম তার স্বপ্নের নায়িকাকে জিজ্ঞেস করেছিলো - প্লীজ সত্যি করে বলো তোমার সাথে আমার সখ্যতা হবার সম্ভবনা কত পারসেন্ট? উত্তরে মেয়েটা সরাসরি কোনো সম্ভবনাই নেই বলতে না পেরে বলেছিলো, এক মিলিয়ন এর এক ভাগ। জিম কিছুক্ষন চুপ থেকে একটা গাল ভরা হাসি দিয়ে বলেছিলো, তার মানে তুমি বলছো একটা সুযোগ আছে।
মানুষ শুধুমাত্র তাই দেখতে পায় যা সে দেখতে চায়।
মুভি বা টিভি সিরিয়ালে আমরা প্রায়ই দেখি কোনো সাইক্রিয়াটিস কাগজে আঁকা একটা বিমূর্ত ছবি দেখিয়ে পেসেন্টকে জিজ্ঞেস করে কি দেখছো? উত্তরে কেও বলে প্রজাপতি আবার কেও বলে চামচিকা। আসলে দুটোর একটাও ছবিতে নেই। কি আছে সেটাও মুখ্য নয়। ছবিটার শুধু কার ভেতরটা কেমন তারই প্রতিফলন ঘটায়। কার ভিতরে কি আছে সেটাই বের করে নিয়ে আসা ছবিটার কাজ।
কোরআনের একদম শুরুর দিকেই বলা আছে এই কিতাবে কোনো বক্রতা নেই। আবার এও বলা আছে যে এই কোরআনই কিছু লোককে বাঁকা পথে পরিচালিত করে। আসলে মানুষ শুধুমাত্র তাই দেখতে পায় যা সে দেখতে চায়। আর সাইক্রিয়াটিস এর ওই ছবিটার মতোই কোরআনের আয়াতও কার ভেতরে কি আছে সেটা বের করে নিয়ে আসে। কোরআন কাওকে বাঁকা পথ দেখায় না। যার ভেতরটা বাঁকা সে কোরআনেও বাঁকা পথই খুঁজে পায়।
কোরআনের একটা আয়াত আছে যাতে বলা আছে -
قُلۡ اِنۡ كَانَ لِلرَّحۡمٰنِ وَلَدٌ ۖ فَاَنَا اَوَّلُ الۡعٰبِدِيۡنَ
বেশীরভাগই এর অনুবাদ করেছেন - "বলো - দয়াময় ‘রাহমানের’ কোনো সন্তান থাকলে আমি হতাম তার উপাসকগণের অগ্রণী।" অর্থাৎ আল্লার যদি কোনো সন্তান থাকতো, তাহলে মুহম্মদ থাকতেন সেই সন্তানের উপাসকগদের মধ্যে সবার আগে।
আর কিছু লোক বলছে - "বলো - দয়াময় ‘রাহমানের’ কোনো সন্তান থাকলেও আমি হতাম তাঁর উপাসকগণের অগ্রণী।" শুধুমাত্র একটা "ও" আর একটা "চন্দ্র বিন্দুর" তে পার্থক্য। কিন্তু মানে দাঁড়ায় - আল্লার যদি কোনো সন্তান থাকতো তাহলেও মুহম্মদ আল্লাহর উপাসকগদের মধ্যেই সবার আগে থাকতেন।
পুরো দুই মুখী দুটো অনুধাবন। আয়াতের সঠিক অনুবাদ কোনটা হবে সেটা এই লেখার মুখ্য বিষয় নয়। লক্ষণীয় ব্যাপারটা হলো একই আয়াত কিভাবে মানুষকে দুভাগে ভাগ করে ফেলছে। অন্তরের খায়েস অনুযায়ী কারো কাছে প্রথমটা আবার কারো কাছে দ্বিতীয়টা ভালো লাগবে। আর এভাবেই কোরআন মানুষের একদম ভিতরের গোমর ফাঁস করে দেয়।
অথবা আরো সহজ উদাহরণ হিসেবে, সবার পছন্দের আয়াত, আয়াতুল কুর্সির মাঝের লাইনটা -
مَنۡ ذَا الَّذِىۡ يَشۡفَعُ عِنۡدَهٗۤ اِلَّا بِاِذۡنِهٖؕ
কে সে, যে তাঁর নিকট সুপারিশ করবে তাঁর অনুমতি ছাড়া?
শেষমেশ হয়তো অনেক বড়ো বড়ো কথা বলা যেত. যেমন - তাই আমাদের সবার উচিত সব কিছু ঝেড়ে ফেলে কোরআনটাকে একবার নিজের মতো করে পড়া। অন্তত নিজের অবস্থান বোঝার জন্যেই। কিন্তু জানি এসব কথায় কোনো রিয়েল ফায়দা নেই। যেখানে সব আলেমরা মিলে একটা রাস্তা অলরেডি দেখিয়ে দিয়েছেন সেখানে শুরু শুধু মাথা খাটানোর কি দরকার! চেষ্টার মাধ্যমে একটা মানুষকে কোনো দল বা ফেরকা থেকে হয়তো মুক্ত করা সম্ভব। কিন্তু মানুষের মনের গভীরে যে দলীয় মনোভাবটা আছে তা থেকে মানুষকে মুক্ত করা প্রায় অসম্ভব। ইনফ্যাক্ট সেটা করতে যাওয়াটাই বোকামি। কারণ প্রত্যেকটা মানুষকে তার নিজের চেষ্টা দিয়েই নিজেকে মুক্ত হতে হবে। ওটাই একমাত্র ওয়ে। ওটাই পরীক্ষা। একমাত্র পরীক্ষা যেখানে অন্যেরটা নকল করে পাশ করে যাবার কোনো উপায় নাই।



Comments
Post a Comment