মুশরিকী এ মন আমার
এইতো, আর পাঁচ মিনিট লাগবে।
ঠিক আছে। তো যা বলছিলাম, অধ্যাপক আবদুল্লা জাহাঙ্গীরের একটা ওয়াজ মাহফিলে উনাকে বলতে শুনেছি, হাদীস ছাড়া কোরান হলো শুধু কয়েকটা সাদা কাগজ। উনার মূল বক্তব্য ছিলো হাদীস ছাড়া ইসলামের আর কিছুই থাকে না। অবশ্য শুধু উনার একার নাম নিয়ে লাভ নেই, এটাই দুনিয়ার সব বড় বড় আলেমদের জাতীয় সংগীত। অবশ্য তাঁরা যে বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যে কথা বলছেন তা না। হাদীসের একনিষ্ট অনুসারীদের কাছে হাদীস ছাড়া কোরান আসলেই সাদা কাগজ। আর হাদীস বাদ দিলে ইসলাম এস দে নো ইট তো আসলেই থাকছে না।
তুই সব হক্কানী আলেমদের পিছনে লেগেছিস কেন বলতো? উনারা উনাদের প্রায় পুরো জীবনটাই পরিপূর্ণ ভাবে ব্যায় করেছেন ইসলাম জানার জন্যে আর সত্য ইসলাম প্রচারের কাজে। উনারা কি পরিমান কষ্ট করেছেন এর জন্যে তা আমরা কল্পনাও করতে পারবো না। আর তুই দুই দিনের যদুমদু লাও কদু হটাৎ উড়ে এসে বড় বড় কথা বলছিস আর এস্পেক্ট করছিস আমি তা বিস্বাস করে নেবো?
না! আমি মোটেও তা এক্সপেক্ট করছি না। ইনফ্যাক্ট পুরানো অভিজ্ঞতা বলে একটা সময় তুই আমাকে এড়িযে চলা শুরু করবি। হুইচ ইস গুড বই ডা ওয়ে।
তাহলে কি ফেসবুকে পোস্ট করে দুনিয়াটা পাল্টে দিবি এই আসায়?
দুনিয়া গোল্লায় যাক। দুনিয়ার সব মানুষ বেহেস্তে গেলে আমার কি আর দোজগে গেলোই বা আমার কি? আমাকে দুনিয়ার সব মানুয়ের সম্পকে কখনও কোয়েশ্চেন করা হবে না। তুই তো আমাকে ভালো করেই চিনিস। শুধু শুধু ভালো মানুষী দেখানো কোনো কালেই আমার স্টাইল ছিলো না।
তাহলে হটাৎ এত ঢং শুরু করেছিস কেনো?
তোর শুনতে ভালো না লাগলে জাস্ট কলটা কেঁটে দিয়ে আমাকে ফেসবুক ফ্রেন্ড লিস্ট থেকে ডিলিট করে দে। তাতে আমারই সুবিধা। আমার লিস্টটা ছোট হয়ে আসে।
নিজের ফেসবুক ফ্রেন্ড লিস্ট ছোট করার জন্যে এতো নকশা?
ফেসবুক ফ্রেন্ড লিস্ট না মামা। যাদের ব্যাপারে আমাকে কোয়েশ্চেন করা হবে সেই লিস্টটা। যাদের সাথে আমার এট লিস্ট কোনো না কোনো সময়ে উটবস ছিলো। বাকিরা গোল্লায় যাক। যাহোক নিজের কৈফিয়ত গাইতে চাচ্ছি না, আমি হক্কানী আলেমদের পেছনে লাগিনি। অতো সাহস, ধর্য্য বা সময় কোনোটাই আমার নাই। আমি শুধু আমার বন্ধুর পেছেনেই লেগেছি। তোর ঘাড় দুহাতে ধরে ঝাকি দেয়াটাই আমার কাজ মনে করছি। তুই বড়জোর আমার গালে দুই একটা চড় থাপ্পড় দিবি? সেটা আমার গায়ে লাগবে না। অপরিচিতরা দিলে অনেক বেশীই লাগে।
আর এত ঝাঁকাঝাঁকির কারণে আমি যদি রেগেমেগে শেষে তোর ঠ্যাংটাই ভেঙ্গে দেই তাহলে কি তুই আগে ডাক্তারের কাছে যাবি না নিজে নিজেই ভাঙ্গা পা ঠিক করার চেষ্টা করবি?
তুই কোন দিকে যাচ্ছিস বুঝতে পেরেছি। ধর্মের মতো এত জটিল জিনিসটা ধর্ম নিয়ে যারা গবেষণার কাজ করে তাঁরা ভালো বুজবে নাকি আমার মতো মৌসুমী কদুরা ভালো বুজবে তাইতো?
হ্যা।
প্রথমত যেখানে আল্লাহ বলেই দিয়াছেন - আমি দিনকে কে বা ধর্মকে সহজ করে দেয়াছি, সেখানে তুই জোর করেই ধর্মকে কঠিন ও জটিল বানাচ্ছিস। তোর এক্সপার্টরা আল্লাহর সোজাসাপ্টা কথাকে টোপকে তোকে ওই কমপ্লেক্সসিটি সেল করছে আর তুইও ওই ওষুধই গিলছিস। একবার ভেবে দেখ ডাক্তার হওয়াটা কি সবার জন্যে আল্লাহ ফরজ করেছেন? বা সবার পক্ষে ডাক্তার হওয়াটা আদোও সম্ভব? অবশ্যই না। ওটা সবার জন্যে না। কিন্তু ধর্ম বোঝাটা কি সবার জন্যে ফরজ না? ধর্ম কি কখনো না বুঝেই পালন করা যায়? তো সবার জন্যে ফরজ এই জিনিসটাই আল্লাহ আবার ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হবার মতো কঠিন করে দিয়াছেন যা সবার পক্ষে সহজে অনুধাবন কথা সম্ভব না? স্পেশালি যেখানে তিনি নিজেই বলেছেন ধর্মকে তিনি সহজ করে দিয়াছেন পালনের জন্যে? তুই যদি ঘুরে ফিরে সেই কাকতাড়ুয়া যুক্তিগুলোর লেজ ধরেই বসে থাকিস তাহলে আমার আর বলার কিছুই নাই।
কিন্তু আল্লাহ তো সহজ করেছেন নবী রসূল পাঠিয়ে, আলেমদের এলেম দিয়েছেন যেন তাঁরা মানুষকে বুঝিয়ে দিতে পারে। কেন তুই কোরানে পাসনি আল্লাহ বলেছেন যারা জানে তাঁদের কাছ থেকে জেনে নাও?
তোকে যদি কেও পাঞ্জাবির হাতা কেটে সাপের লেজ বলে চালিয়ে দেয় আর তুই তাই পয়সা দিয়ে কিনে মহা খুশিতে বাকবাকুম করতে থাকিস তাহলে আর কি বলার আছে। যারা জানে তাদের কাছ থেকে জেনে নেবার ওই আয়াতটা কাকে কার কাছ থেকে কোন বিষয়ে কি জানতে বলেছেন তা বিস্তারিতই বলা আছে। কুকুরের মাংস হালাল না হারাম জানার জন্যে আলেমদের পিছনে দৌড়াতে বলেনি।
তো কোন বিষয় তা জানতে বলেছেন?
পরে দেখ। আগেও বলেছি খেঁটে খা, গায়ে লাগবে। যার সত্যি জানার আগ্রহ আছে সে খুঁজে বের করে জেনে নেবেই। স্পেশালি এই ইন্টারনেটের যুগে সেটা কোনো ব্যাপারী না।
আর দ্বিতীয়ত?
দ্বিতীয়ত?
ওই যে প্রথমত দিয়ে বলা শুরু করেছিলি।
কি জানি। ভুলে গেছি। যাহোক তোর পেছনে এক ডাল থেকে আরেক ডালে ঝুলতে ঝুলতে আমার আসল কথাটাই বলা হচ্ছে না।
কি কথা?
ওই যে তুই জিজ্ঞেস করেছিলি, হাদীস যে আসলেই রাসূলের মুখের কথা না সেটার প্রমান কি? বড় বড় আলেমরা অবশ্য আরো গুছিয়ে চমৎকার ভাষায় বলবেন, আমরা হাদীস যাদের কাছ থেকে পেয়েছি, কোরানও তো তাঁদের কাছ থেকেই পেয়েছি। তাহলে হাদীসকে বিস্বাস না করলে তো কোরানও একই যুক্তিতে অবিশ্বাস করা যায় তাই না?
হ্যা, তো এখন তোর সেই শ্রদ্ধেহ স্টিল ম্যান আর্গুমেন্টটা বল শুনি।
তাহলে মনোযোগ দিয়ে শোন। ঘুরে ফিরে সব খেলার শেষ খেলা হলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ তাই না? মানে কেও কোনো প্রকার শেরেকি ছাড়াই আল্লাহকে একমাত্র ইলা হিসেবে মানে কিনা সেটা দেখার খেলাই তো আমরা খেলছি তাইনা?
খেলা বলে তুচ্ছ করাটা ঠিক না বাট বলে যা।
সত্য কথা। আল্লাহ কোনো খেলা খেলতে বসেননি। তা ছাড়া কোন লোকের মনের গহীনে কি আছে তা আল্লাহ ওই লোকের থেকেও ভালো করেই জানেন তাই না? এত খেলা খেলিযে জানার দরকার কি?
হুম।
জানার দরকারটা তাঁর না। দরকারটা আমাদেরই। কারণ আমরা নিজেরাও জানিনা আমাদের কার মনের গহীনে কোন চিপায় মুশরিক নামের বানরটা লুকিয়ে আছে। যার আল্লাহর সাথে কারো শরিক না করলে মোটেও ভালো লাগে না। জোর বিস্বাসের সাথে মুখে যত জোরেই এলান দেইনা কেন - আল্লাহ ছাড়া আমি আর কাওকে মানি না, ওই লুকোনো বানরটা ঠিকই লেজ দুলিয়ে দুলিয়ে হাসে আর ভাবে, সময় মতো দেখা যাবে বাছাধন। কারণ একটা না একটা সময় এই বানরটা বাঁদরামো করবেই। ওর চরিত্রের কারণেই হোক বা আল্লার হুকুমেই হোক, ওকে বেড়িয়ে আসতে হবেই। আর এ কারণেই চোখের সামনে মুসার নীলনদ দুভাগ করতে দেখেও তাঁর অনুসারীরা আবার গরু পূজায় ফিরে গিয়েছিলো। যেতে তারা বাধ্য। কারণ মুখে আল্লাহ মুসা করলেও তারা তাদের মুশরিকী বানরটাকে মন থেকে তাড়াতে পারেনি। আর একারণেই ঈসার মৃত্রুর পরে তাঁর অনুসারীরা স্বয়ং ঈসাকেই আল্লাহর সাথে শরিক করিয়ে দিয়েছে। আর এ কারণেই ...
তুই কোনদিকে যাচ্ছিস বুঝতে পড়েছি কিন্তু ওসবের সাথে আমার প্রশ্নের সম্পর্ক কি? অতো না পেঁচিয়ে সোজাসোজি বল।
তুই আমি কোরানকে কেনো আল্লাহর কথা হিসেবে বিস্বাস করি বলতো? কারণ আমাদের বাবদাদা মুরুব্বীরা বলেছেন এ জন্যেই? সত্যি করে বলতো বাবদাদা বা ডক্টর জাকির নায়েকের কাছ থেকে না শুনেই, শুদু কোরান পরেই কখনও আমাদের মনে হয়েছে এই কথা এক মাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছ থেকে আসা সম্ভব নয়?
হবে না কোনো, অবশই হয়েছে। বেশ কয়েক কয়েক বারই হয়েছে।
তাহলে কোরানটা কার মাধ্যমে তোর হাতে এসে পৌঁছেছে সে তথ্যের আদোও কোনো ভ্যালু আছে কি তোর কাছে? তুই যখন মেনেই নিয়েছিস এটা আল্লাহর কথা তাহলে কোরান তুই মসজিদের হুজুরের কাছ থেকে পেয়েছিস নাকি নীলক্ষেত থেকে কিনে এনেছিস সে হিসেবে যাবার মানেটা কি? যারা কোরান দিয়েছে তারাই হাদীস দিয়েছে এ ধরনের ফালতু কথার কি দরকার? মানে কোরান সত্যি মানলে হাদীস কেও সত্যি মানতে হবে এই কি দাবি? সেই ইমোশনাল ব্ল্যাক মেইলের ভাওতা বাজি! যে হুজুর বিশুদ্ধ কোরান শেখান উনি কি মিথ্যা কথা বলতে পারেন না?
উত্তেজিত না হয়ে ঠান্ডা মাথায় বল।
যারা শুধু কোরানের কারণের কোরানের উপর বিস্বাস এনেছে, তাদের কাছে কোরানটা কোথা থেকে কার মাধ্যমে এসে পৌঁছচ্ছে সেটা কখনই কোনো ব্যাপার ছিল না। এ যুগেও না, স্বয়ং রসূলআল্লাহ মুখ দিয়ে বের হবার সময়ও না। আর যারা কোরানের উপর বিস্বাস না এনে শুধু বাবদাদার উপরই ঈমান এনেছে তাদের কাছে স্বাবাভিক ভাবেই ওই সিলসিলাটাই জরুরি। ওই সিলসিলা ধরেই ওদের ওই মুশরিকী বানরটা ঝুলছে। ওই সিলসিলা ধরে টান দিলেই ওদের বানরটা দাঁতমুখ খিচিয়ে বেরিয়ে আসে। বেরিয়ে আসতে বাধ্য ও। কারণ ওই সিলসিলাই ওর যান। তাই বেরিয়ে এসে কোরানের বৈধতা সম্বন্ধেও প্রশ্ন তুলতে বিন্দু মাত্র দ্বিধা বোধ করে না। করবে কোনো? সিলসিলা ছাড়া তো কোরান ওর কাছে কিছু সাদা কাগজ ছাড়া আর কিছুই না।
তুই যে এত কথা বললি, এগুলো কি কোরানের কোনো আয়াতে আছে?
ভাবটা এমন যে থাকলেই তুই চোখ বন্ধ করে বিস্বাস করে নিতি? কোরানে তো বলা আছে আলেমরা আল্লাহর কিতাব পিঠের পেছনে ফেলে নিজ হাতে সব কিতাব লিখে ব্যাবসা ফেঁদে বসে। একদম পরিষ্কার কথা। কই মেনে নিয়েছিস?
আরে বাবা ওটাতো ইহুদি খ্রিস্টানদের আলেমদের ব্যাপারে বলেছেন।
তো আল্লাহ কি শুধু ইহুদি খ্রিস্টানদের আলেমদের ভৎসনা করার জন্যেই বলেছেন নাকি এটাই সব সময় ঘটে সেই সাবধান বাণী দেবার জন্যে বলেছেন? এ জন্যেই আল্লাহ আক্ষেপ করে বলেছেন তোমরা খুব কমই শিক্ষা গ্রহণ করো। আর এ জন্যেই রাসূলাল্লাহ কেয়ামতের দিন বলেছেন, তারা কোরান কে পরিত্যাজ্য মনে করেছে। খেয়াল কর রাসূলাল্লাহ পরিত্যাক্ত বলেননি, পরিত্যাজ্য শব্দটা ইউস করেছেন। মানে সাদা কাগজের মতোই পরিত্যাজ্য। একদম চকচকা কোরানের আয়াত, মানে এই ঘটনা ঘটেছে সে বিষয়ে কোনোই সন্দেহ নেই। কই মেনে নিতে পারছিস?
তুই কিন্তু মামা সুকৌশলে কর্তাড়ুয়ার মতো আসল প্রশ্ন থেকে পিছলে বেরিয়ে গেছিস। হাদীস যে আসলেই রাসূলের মুখের কথা না সেটার প্রমান কি?
সেটা প্রমান করা আমার মতো যদুমদু লাও কদুর কাজ না। ওটা তোর হক্কানী আলেমদের কাজ এবং তারা বেশ নিষ্ঠার সাথেই তা করে যাচ্ছেন। একদম প্রথম দিকে বুখারী সাহেব করেছেন। গত শতকেও সহি আকিদার মুক্ষমনিরা বুখারী মুসলিম সাহেবের প্রায় দেড়শোর মতো হাদীস বাতাসে উড়িয়ে দিয়েছেন। এই কিছুদিন আগেও সৌদি বাদশার খায়েশে তাঁরা আরো কিছু হাদীসকে সহি থেকে ডিমোশন দিয়েছেন। ধর্য্য ধর, সামনে আরো আসছে।
তুই এই ইসলাম নিয়ে আমার সাথে আর কোনো আলাপ করবিনা প্লিজ।
হ্যা। আমার যা বলার বলা হয়ে গেছে। তোর পাঁচ মিনিট শেষ হয়েছে না?



Comments
Post a Comment