কাকতাড়ুয়া যুক্তি


এই যে তুই খালি কোরান কোরান করিস, কোরানে যে অতিউল্লাহা ওয়া আতিউররাসূল কথাটা বলা আছে সেটা কি কখনো দেখেছিস? 

দেখেছি। একবার না, বেশ কয়েকবার বলা আছে। 

আর তাহলে ঐটাও তো কোরানে দেখেছিস যে আল্লাহ বলেছেন, নবী যা দেয় তা থেকে নাও আর যা নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাকো?

তুই নিশ্চই আমাদের লাস্ট আলাপের পর কোনো হুজুরের সাথে আলাপ করেছিস?

কার সাথে কি আলাপ করেছি সেটাতো কথা না। তোকে যা প্রশ্ন করছি তার জবাব দে। 

হুজুর নিশ্চই প্ৰথমে কোরানে তো নামাজের বর্ণনা নাই তো হাদীস ছাড়া নামাজ পড়বেন কিভাবে, সেই বল্লম দেখিয়েছে? তারপর অতিউল্লাহা ওয়া আতিউর রাসূলের তরবারি বের করেছেন? তারপর নবী যা দেয় তা থেকে নাও জাতীয় আরো কিছু ছুরি কাঁচি হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন?

এখন তো তুই বেশ কথা ঘুরাচ্ছিস। আমি যা বলছি তার জবাব দে। 

তোর পয়েন্টটা কি সেটা বল। 

পয়েন্ট হলো কোরানে আল্লাহ সরাসরি নবী কে মান্য করতে বলেছেন। আর নবী যা যা  করার আদেশ করেছেন তা করতে আর যা যা নিষেদ করেছেন তা না করতে বলেছেন। তো এখন তুই বল হাদীস না মানলে তুই নবীজিকে মান্য করবি কিভাবে? এটাকি হাদীস আর কোরান দুটাই অমান্য করা না?

তুই কখনো কাকতাড়ুয়া যুক্তির নাম শুনেছিস?

নে। এখন প্যাচা?

ইংরেজিতে স্ট্র-ম্যান আর্গুমেন্ট বলে। ধর যখন কেও একজন স্টেটমেন্ট এ কে ফল্স প্রমান করতে চাইছে, তখন সে সেই ছোট বেলার অংক কষার মতো বলবে, মনেকরি স্টেটমেন্ট এ একুয়ালস টু স্টেটমেন্ট বি। সেক্ষেত্রে স্টেটমেন্ট বি যদি ফল্স প্রমান করে দেয়া যায় তাহলে অবশই মেনে নিতে হবে স্টেটমেন্ট এ ও ফল্স রাইট? তারপর সে ঘন্টা ব্যাপী নানা রকম যুক্তি তর্কের মাধ্যমে সন্দেহাতীত ভাবে প্রমান করেই ছাড়বে স্টেটমেন্ট বি সত্যিই ফল্স। এবং তাই দেখে জনগণ মনোমুদ্ধ হয়ে হাততালি দিতে দিতে ভুলেই যাবে যে স্টেটমেন্ট এ যে আসলেই একুয়ালস টু স্টেটমেন্ট বি সেটাই প্রমান করা হয়নি। ওটা কেবল ধরেই নেয়া হয়েছিলো। 

বাংলায় বল। 

হাদীসকে না মানার সাথে রাসূলকে না মানার সম্পর্ক কি? হাদীস না মানা মানে হলো হাদীসে বর্ণিত কথাগুলো যে আসলেই রাসূলের মুখ থেকে এসেছে সে বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা। রাসূলকে কে যে মানতেই হবে সে বিষয়ে তো কারো কোনোই সন্দেহ নেই।

তো আলেমরা তো কোনটা অথেন্টিন হাদীস কোনটা যঈফ হাদীস সেটা নিবাচন করেছেন অলরেডি। 

আর তাই হাদীস না মানা মানে হচ্ছে আলেমদের অথেন্টিসিটির পদ্ধতির উপরে সন্দেহ প্রকাশ করা।  স্বয়ং রাসূলকে মানা না মানার সাথে এর কোনো সম্পর্কই নাই। 

তো তুই বলছিস মসজিদের ইমাম সাহেব আমাকে ভুল বলছে?

তোর ইমাম না, ইউটুবে খুঁজে দেখ। দুনিয়ার সব নাম করা আলেমরাই এই একই সার্কাস খেলে। ডক্টর জাকের নায়েক থেকে শুরু করে আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর সাহেব, নোমান আলী খান, ইয়াসির কাঁদি সবাই। প্রথমেই রাসূল কে না মানার একটা ইমোশনাল ব্ল্যাক মেইলের মালা গলায় ঝুলিয়ে দেবে। তারপর যা বলবে তুই শুধু হা হু-ই করবি। একবারও কোরান খুলে দেখবি না আসলে কি বলা আছে। ওই যে নবী যা দেয় তাই নাও আর যা নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাকার আয়াত কখনো পরে দেখেছিস? আগে পিছের কয়েকটা লাইনও পরে দেখ। আল্লাহ ওখানে পরিষ্কার গনিমতের মালের কথা বলছেন। একটা স্পেসিফিক এক্সপেডিশনে মুজাহিদরা কোনো যুদ্ধ ছাড়াই জিতেছে বলে আল্লাহ ওই যুদ্ধের গনিমতের মাল কে কেবল আল্লাহ আর তাঁর রাসূলের বলেছেন। আর ওই মাল থেকে রাসূল যাকে যা দেন শুধু তাই নিতে বলেছেন। আর যা দেননা তা নিতে নিষেধ করেছেন। আর ওই গনিমতের মালকেই তোর ইমাম সাহেব রাসূলের হাদীস বলে চালিয়ে দিচ্ছেন।        

তো এখন হাদীস ছাড়া তুই রাসূলকে মান্য করবি কিভাবে!

সেটা আরেক প্রশ্ন। এখন তুই নিজেই নিজের প্রসঙ্গ পাল্টানোর আগে বল আতিউর রাসূলের সাথে এর কোনো সম্পর্ক আছে কি নাই। 

আমি বুঝতেছিনা। আল্লাহ রাসূলকে মান্য করতে বলছেন তো হাদিস ছাড়া মানবো কিভাবে?

এটাযে একটা ভিন্ন প্রসঙ্গ অতটুকু কি বুঝতে পারছিস?

তো হাদীস যে রাসূলের মুখের কথা না সেটা তুই প্রমান করবি কিভাবে?

সেটা বুঝতে গেলে তোকে স্টিল-ম্যান আর্গুমেন্ট বুঝতে হবে। তার আগে আমি যতটুকু বলেছি তুই অতটুকুই হজম করে নে। 

Comments